জামাআতের ইসলামী হিন্দের সংগ্রামের ৭৫ বছর পথপরিক্রমাকে সামনে রেখে কলকাতা প্রেস ক্লাবে জামাআতের মিডিয়া গেট টুগেদার।

কলকাতা প্রেস ক্লাবে জামাআতে ইসলামী হিন্দের পশ্চিমবঙ্গের শাখার উদ্যোগে একটি মিডিয়া গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত হয় আজকে। এই গেট টুগেদারে জামাআতের ইসলামী হিন্দের সংগ্রামের ৭৫ বছর পথপরিক্রমাকে সামনে রেখে আলোচনা পেশ করেন জামাআতের ভাইস প্রেসিডেন্ট (নায়েবে আমীর) প্রফেসর মোঃ সেলিম ইঞ্জিনিয়ার সাহেব। এছাড়াও বক্তব্য পেশ করেন আমীরে হালকা মাওলানা আব্দুর রফিক সাহেব। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মিডিয়া সম্পাদক ডাঃ মশিহুর রহমান সাহেব, রাজ্য বিভাগীয় সম্পাদক মাওলানা তাহেরুল হক সাহেব, সাদাব মাসুম সাহেব প্রমুখ।
ইঞ্জিনিয়ার সেলিম সাহেব বলেন, ভারতবর্ষের নাগরিকরা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই সমস্ত চ্যালেঞ্জের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল সাম্প্রদায়িকতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ ও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও বিদ্বেষের বাতাবরণ। এছাড়া সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা হল জনগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। ভারতীয় সমাজের নির্যাতীত ও পশ্চাদপদ গোষ্ঠীর পক্ষে আওয়াজ ওঠানো এবং তাদের জন্য প্রদত্ত সাংবিধানিক অধিকারকে বলবৎ করার দায়বদ্ধতা একটি বড় প্রশ্নের আকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন নয়, সবার অধিকারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা হল গণতন্ত্রের আসল কথা। শক্তিশালী সমাজের নিদর্শন হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংযুক্তি। উগ্রপন্থা, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্যের অধিকারকে পদদলিত করা মানে হল সমাজকে ভিতর থেকে দুর্বল করা, গণতন্ত্র ও মানবীয় মূল্যবোধকে আঘাত করা। সীমাহীন ক্ষমতা ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটায়। ইউরোপে গণতন্ত্রের পথ ধরে ফ্যাসিবাদ এসেছিল। বর্তমানে রাজনীতিতে স্বৈরাচারিতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ফ্যাসিবাদের পদধ্বণি শোনা যাচ্ছে, যা দেশের জন্য আদৌ মঙ্গলজনক নয়।
দুর্নীতি, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি, জাতপাত, ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িকতা রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে। ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতি ও ভারসাম্যহীন অর্থনীতি দেশের জনগণের প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলি পুঁজিবাদীদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। তাদের স্বার্থে পুরোপুরি কাজ করছে। তিনি আলোচনায় উল্লেখ করেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলের সংখ্যালঘুদের প্রতি শত্রুতা এবং স্বৈরাচারী মানসিকতা সবার কাছে এখন স্পষ্ট।
বাণিজ্য, পুঁজি এবং আমলাতন্ত্রের পর এখন রাজনীতি ও জনপরিষেবা লোভ-লালসার শিকার হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেশের নানান সমস্যার জন্য দায়ী। এখন প্রয়োজন হল সৎ মানুষদের একত্রিত হওয়া। মূল্যবোধের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সংগ্রাম সাধনা করা। জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা, শ্রেণি স্বার্থ, অপরাধ এবং দুর্নীতির মামলায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কখনোই কাম্য নয়।
ভারতীয়রা ধর্মবিরোধী নয়। ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, তার অনুশীলন ও প্রচারের অধিকার প্রত্যেক নরনারীর জন্য সংবিধানে প্রদত্ত হয়েছে। ধর্ম কেবল ব্যক্তিগত ব্যাপার – এই বলে একে সংকুচিত করার প্রচেষ্টা এক অপপ্রয়াস ছাড়া কিছু নয়। দেশের বৃহৎ অংশের জনগণ ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। ধর্মীয় পথনির্দেশনা ব্যতিরেকে অধার্মিকতা তাদের ওপর আরোপ করা হলে তা হবে নিষ্পেষণমূলক ও অকার্যকর। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় উত্তেজনার জন্য ধর্ম দায়ী নয়। সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার এর জন্য দায়ী। ধর্মকে সমাজ বিনির্মাণে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে দেওয়া উচিত। নায়েবে আমীর জামাআত সংগঠনের পথপরিক্রমার কথা উল্লেখ করে বলেন, জামাআতে ইসলামী হিন্দ ১৯৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর একত্বের দিকে আদর্শিকভাবে সকল জনগণকে আহ্বান জানিয়ে এসেছে জামাআতে ইসলামী হিন্দ। সমাজে শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব, যখন মানুষ স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁর আনুগত্য ও উপাসনা করে কর্মের জগতে সদা তৎপর থাকবে।
গেট টুগেদারে আমীরে হালকা মাওলানা আব্দুর রফিক সাহেব বলেন, জামাআত মূল্যবোধভিত্তিক সমাজের বিনির্মাণ চায়। স্রষ্টার আনুগত্য ও মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতাভিত্তিক সমাজ নির্মাণ – এই দুটো বিষয়কে সামনে রেখে বিগত ৭৫ বছর ধরে জামাআত কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সদ্ভাব তৈরি ও আলাপ-আলোচনার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। তবেই শান্তি ও সম্প্রীতি আসবে। জামাআত সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। জামাআত মনে করে ধর্মের অপব্যবহার করে সমাজে শান্তি বিঘ্নিত হয়েছে। সমাজের পুনর্গঠনে ধর্মকে গঠনমূলক ভূমিকায় নিয়ে আসতে হবে – জামাআতের আহ্বান এটাই। উগ্রপন্থা পরিহার, সহিষ্ণুতা এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদানকে জামাআত অপরিহার্য মনে করে। জামাআত ধর্মের প্রচারে বিশ্বাসী। তবে প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই তা করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমীরে হালকা বলেন,
জামাআত সকল নাগরিকের জন্য সুবিচার কায়েমের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। এর জন্য বিভিন্ন এনজিও, সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের সাথ দিয়েছে, তাদের সহযোগী হয়েছে।
নায়েবে আমীরে জামাআত সহ উপস্থিত নেতৃবৃন্দের আলোচনায় উঠে আসে জামাআতের কাজের বিভিন্ন দিক। আলোচনায় উল্লেখ করা হয়,
জামাআত সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিচার, সাম্য এবং পশ্চাদপদ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে আওয়াজ ওঠায়। ধার্মিক জনমোর্চা, সদভাবনা মঞ্চ প্রতিষ্ঠায় এর জন্য সহযোগিতা দিয়ে এসেছে। তাদের অংশ হিসেবে কাজ করছে।
জামাআত মূল্যবোধভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এই লক্ষ্যে যারা কাজ করছে তাদের সমর্থন দিয়ে চলেছে।
দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেরোজগারি, ক্ষুধা, শিক্ষায় পশ্চাদপদতা দূরীকরণ, মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে সাহায্য দেওয়ার জন্য ভিশন-২০১৬ এবং তৎপরবর্তী ভিশন-২০২৬ নামে সমাজ উন্নয়ন কর্মসূচিতে সহযোগিতা দিয়ে চলেছে।
জামাআত বিনাসূদী ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠন কায়েম করেছে। বিনাসূদী ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনমত তৈরি করছে। এছাড়া আর্থিক অসাম্য ঘোচাতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প ও বিনাসূদী প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী কর্মরত রয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা, সবার জন্য শিক্ষা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাজেটের ৮ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে এসেছে এবং বিভিন্ন ফোরামে এ সংক্রান্ত তার বক্তব্য পেশ করেছে।
জামাআত ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি এ্যান্ড কম্যুউনাল এমিটি ও মুভমেন্ট ফর পিস এ্যান্ড জাস্টিস (এমপিজে), এপিসিআর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব, সবার জন্য সুবিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রয়াসে সহযোগী হয়েছে।
ছাত্র সংগঠন এসআইও অফ ইন্ডিয়া, সারা ভারতে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন হিসেবে ১৯৮২ থেকে কাজ করে আসছে। রাজ্যস্তরে যুব সংগঠন এবং গার্লস ইসলামিক অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুবক-যুবতী ও ছাত্রীদের মধ্যে চরিত্র নির্মাণ ও নৈতিক মূল্যবোধের ধারণে প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, নারীদের অধিকার এবং ইসলাম প্রদত্ত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা দেশে জামাআতের মহিলা কর্মীরা কাজ করছেন।
গেট টুগেদার শেষে মিডিয়ার উপস্থিত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন নায়েবে আমীরে জামায়াত প্রফেসর সেলিম ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এবং আমীরে হালকা মাওলানা আব্দুল রফিক সাহেব।
মিডিয়া সম্পাদক ডাঃ মশিহুর রহমান সাহেব এর ধন্যবাদ জ্ঞাপন এর মাধ্যমে গেট টুগেদার শেষ হয়।

আরো পড়ুন

কার্যকলাপ

বিস্তারিত পড়ুন

পলিসি

বিস্তারিত পড়ুন

রেজুলেশন

বিস্তারিত পড়ুন

আরো পড়ুন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানালেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি সাইয়েদ সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনি। দীর্ঘ ১৫ মাস পর হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের চুক্তি প্রসঙ্গে

দেশ তথা জাতির উন্নয়নে কর্মীদের সদার্থক ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে মালদায় জামাআতে ইসলামী হিন্দের কর্মী প্রশিক্ষন শিবির ২০/০৮/২০২৩ : দেশ তথা জাতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষ

Ref: jihwb-med/23 Date: 09/07/23   প্রেস বিজ্ঞপ্তি   রাজ্যজুড়ে সহিংসতা রুখতে প্রশাসনকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জামাআতের।   পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে