সঙ্কটের আবর্তে বিশ্বমানবতা
মানব সমাজ আজ চরম সঙ্কটের সম্মুখীন। মূল্যবোধের অবক্ষয়, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা, হিংসা, সন্ত্রাস, হত্যা, রাহাজানি আজ বিশ্ব মানবতাকে হুমকির সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রচার মাধ্যম এই অবস্থার সংশোধনের পরিবর্তে অবক্ষয়কে আরো বৃদ্ধি করার উপকরণে পরিবর্তিত হয়েছে। এই সকল যাবতীয় সংকটের মূলে রয়েছে বিশ্ব-জাহানের মালিক, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে ভুলে যাওয়া এবং তাঁর পাঠানো ঐশী বিধানকে উপেক্ষা করা। মানুষ পরকালীন জীবনের জবাবদিহির ব্যাপারে বে-পরোয়া থেকে জীবনকে লাগাম ছাড়া স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যবসিত করেছে। সভ্যতার এটাই সবচেয়ে বড় সংকট। এই সংকট থেকে মুক্তি দিতে পারে এমন একটি জীবনাদর্শ যা সুবিচারপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার ভীত গড়ে দিতে সক্ষম। যে জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ পাবে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ। সাম্রাজ্যবাদের বিরূদ্ধে এবং মানবীয় মূল্যবোধ রক্ষার পক্ষে বিশ্বব্যাপী এক সর্বাত্মক বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন সেইরূপ এক সার্বজনীন চিরন্তন সত্য জীবনাদর্শ।
ইসলামই মুক্তির পথ
জামাআতে ইসলামী হিন্দ মনে করে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পাঠানো জীবনাদর্শ ‘ইসলামই’ সেই জীবনাদর্শ। ইসলামের অনুসারী হিসাবে জামাআত বিশ্বাস করে বিশ্বের সমস্ত মানুষ এক ও অভিন্ন। তারা সকলেই একই মাতা পিতা আদম ও হাওয়া (আঃ) -এর সন্তান। সুতরাং সকল মানুষ রক্তের সম্পর্কের ভাই ও বোন।
জামাআত গভীরভাবে বিশ্বাস করে বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা, মালিক ও পরিচালক এক ও একক আল্লাহ রব্বুল আলামীন। তাঁরই সু-নিয়ন্ত্রিত পরিচালনায় পরিচালিত হয় চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র থেকে শুরু করে বিশ্বের যাবতীয় সৃষ্টি নিচয়। একমাত্র তিনিই জানেন জীবনের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ। মানুষের সমস্ত প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, সামর্থ্য-দুর্বলতা, জ্ঞানের পরিধি ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে একমাত্র তিনিই পূর্ণ জ্ঞাত। সুতরাং সেই অনুপম সত্তার প্রেরিত জীবন বিধানই মানব জীবনের চিরন্তন সার্বজনীন জীবনাদর্শ। মহান স্রষ্টা যুগে যুগে নবী ও রসূলদের মাধ্যমে এই জীবন বিধান প্রেরণ করেন। এই বিধানের নামই ‘ইসলাম’। ইসলামের সর্বশেষ সংস্করণ প্রেরিত হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে।
ইসলাম প্রতিষ্ঠাই জামাআতের মূল লক্ষ্য
জামাআতে ইসলামী হিন্দের লক্ষ্য মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগে ইসলামের পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইহ-জীবনের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও পরকালীন জীবনের পূর্ণ সাফল্য অর্জন করা। ইসলাম যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্যের ধারক তেমনি পার্থিব জীবনকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। এই দ্বীন বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের কাঙ্খিত পুনর্গঠন সম্ভব। সঙ্কট জর্জরিত ক্লেদাক্ত পৃথিবীকে মুক্ত করা সম্ভব একমাত্র এই দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তাই জামাআত চায় ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনের সকল বিভাগে এই দ্বীনকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে, যার ফলে ইসলামের বিধান অনুযায়ীই পরিচালিত হবে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ। এর ফলে মানব জীবন যাবতীয় সঙ্কট থেকে মুক্ত হয়ে দেখতে পাবে চিরন্তন মুক্তির রাজপথ। পৃথিবী পরিণত হবে এক ক্লেদ মুক্ত অনাবিল শান্তিপূর্ণ আবাস ভূমিতে।
কর্ম পদ্ধতি
জামাআতে ইসলামী হিন্দের সমস্ত কর্ম তৎপরতার মূল বুনিয়াদ পবিত্র কুরআন ও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শ। জামাআত নিজের কাজের ব্যাপারে সর্বাবস্থায় নৈতিকতার সীমারেখা মেনে চলে। কখনও সততা ও বিশ্বস্ততা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী, শ্রেণী সংগ্রামে উস্কানী দানকারী, তথা জলস্থলে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কোন উপায় উপকরণ ও পদ্ধতি অবলম্বন করে না। স্বীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য জামাআত গঠনমূলক শান্তিপূর্ণ পদ্বতি অবলম্বন করে। ব্যক্তি ও সমাজের সঙ্গে ধারাবাহিক সংযোগ, পুস্তক-পুস্তিকা, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদির মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রচার ও উন্নতমানের প্রশিক্ষণের দ্বারা চিন্তা-চেতনা ও চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে জামাআত চায় সমাজ জীবনে কাঙ্খিত এক সর্বাত্মক পরিবর্তন।
কর্মসূচী
জামাআত তার সূদীর্ঘ যাত্রা পথে আপন কর্ম তৎপরতার সার্বিক পর্যালোচনার জন্য চার বছরের মেয়াদ কাল নির্ধারণ করেছে। এই সময়কালকে বলা হয় মীকাত। বর্তমান মীকাত চলছে এপ্রিল, ২০১৯ Ñ মার্চ, ২০২৩। প্রতি মীকাতের মত বর্তমান মীকাতেও জামাআত পৃথক পুস্তিকার মাধ্যমে তার পলিসি ও প্রোগ্রাম পেশ করেছে।
দাওয়াত
জামাআতের কর্মসূচীতে দাওয়াতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। “দাওয়াত’ কথাটির অর্থ আহ্বান। সত্যের দিকে আহ্বান, ইসলামের দিকে আহ্বান। জামাআতে ইসলামী হিন্দ চায় এদেশের সমস্ত অমুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সৌভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে। চায়, ইসলাম, মুসলমান ও ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে ভ্রান্ত ও কু-ধারণা দূর করতে। ইসলামের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র তাদের সামনে এমনভাবে তুলে ধরতে যাতে তারা আল্লাহর একত্ব, রেসালাত (আল্লাহ প্রেরিত বার্তাবাহকদের ধারা) এবং আখিরাত বা পরকালীন জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। এবং বিশ্ব জাহানের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের উপাসনা ও তাঁর আদেশ অনুযায়ী জীবন যাপনের রাস্তা তাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। বর্তমান বিশ্ব সভ্যতার যাবতীয় সঙ্কট দূর হতে পারে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এ-কাজে শুধু ইহকালে নয় পরকালীন জীবনেও মিলবে চূড়ান্ত সাফল্য। জামাআত সমস্ত মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়াকে তাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করে। এই কাজ করার জন্য জামাআত তার সাংগঠনিক শক্তিকে পূর্ণভাবে কাজে লাগায়। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সাক্ষাৎকার, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার, চা-চক্র সভা-সমাবেশ ছাড়াও পুস্তক, পুস্তিকা প্রকাশ ও বিতরণ, মিডিয়া, ই-মেইল, ওয়েবসাইটসহ সম্ভাব্য সকল উপকরণকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ
স্থানীয় ও আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন হাদীসসহ ইসলামের মৌলিক গ্রন্থের অনুবাদ ও প্রকাশ।
আধুনিক যুগ জিজ্ঞাসার জবাব সম্বলিত বই পুস্তক প্রকাশ।
প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সব রকম সুযোগকে ব্যবহার করা।
বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদের নিয়ে মোর্চা গঠন।
ইসলামী সমাজ
নৈতিক অবক্ষয়ের প্রভাব আজ মুসলিম সমাজকেও ব্যাপকভাবে গ্রাস করেছে। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সমাজ গঠিত না থাকার কারনে মুসলিমরাও নানান রকম কুসংস্কার শির্ক ও বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ফলে মিল্লাতে ইসলামিয়া আজ নানান সমস্যায় জর্জরিত। নিজেদের মধ্যে অমিল, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিচ্ছিন্নতা উম্মাতে মুসলিমাকে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে। সত্য পথ প্রাপ্ত মধ্যপন্থীদল হিসাবে আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার মানুষের সামনে উপস্থাপন করার মহান দায়িত্বকে আজ তারা ভুলতে বসেছে।
জামাআত মনে করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ত্যাগ করার ফলে বর্তমানে মিল্লাতে ইসলামিয়া এই অবক্ষয়ের শিকারে পরিণত হয়েছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম সমাজ ইসলামী শিক্ষার আলোকে তাদের জীবনাচরণকে সংশোধন না করবে, নিজেদের চরিত্রকে ঢেলে না সাজাবে, আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ মিল্লাত হিসাবে পেশ না করতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই মুসলিম উম্মাহকে ‘খায়রা উম্মাহ’ বা সর্বোত্তম জাতির মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য জামাআত সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ
ইমাম ও উলামা সমাজকে ছোটখাটো মসলকী ভেদাভেদ ভূলে ঐক্যবদ্ধভাবে ইকামাতে দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য জেলায় জেলায় ইমাম পরিষদ ও উলামা কাউন্সিল গঠন করার প্রচেষ্টা।
যুবকদের চরিত্র ধ্বংসকারী সংস্কৃতি থেকে মুখ ফিরিয়ে সুস্থ সংস্কৃতির দিকে ফেরানোর জন্য ‘অনন্য’ শিল্পী গোষ্ঠী গঠন।
পারিবারিক জীবনকে ইসলামের ধাঁচে গড়ে তোলার বিশেষ পদক্ষেপ।
পারিবারিক বিবাদ মীমাংসার জন্য ‘দারুল কাযা’ এবং কাউন্সেলিং সেন্টার গঠন।
স্কুল, মাদ্রসা, মসজিদ, দারসগাহ গড়ে তোলা।
শিশুদের উপযোগী ইসলামী বই পুস্তক প্রকাশ।
মিল্লী সমস্যা
মুসলিম সমাজের সাধারণ সমস্যার ব্যাপাওে জামাআত ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার পক্ষপাতী। সমাজের বিভিন্ন মসলকের প্রতিনিধিগণ যাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের সমস্যা দূর করতে পারেন জামাআত সে ব্যাপারে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
কয়েকটি পদক্ষেপ
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল‘ বোর্ড গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন।
নিরাপরাধ মুসলিম যুবকদের সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করার প্রয়াসকে আইনী ও সামাজিকভাবে মুকাবিলা করা।
কাদিয়ানিয়াত ও ইসলাম দ্রোহিতা প্রতিরোধের সঠিক প্রচেষ্টা।
খিদমাতে খালক্ বা সৃষ্টির সেবা
ইসলাম মানুষকে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছে। জামাআত সেই শিক্ষার আলোকে সাধ্যমত সমাজ সেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জামাআত তার প্রতিটি কর্মীকে সাধ্যমত সমাজ সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে। সেবার কাজে পেশাদারিত্ব নিয়ে আশার জন্য জামাআত রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (সংকট মুকাবিলা বাহিনী) তৈরী করেছে। খরা, বন্যা, দাঙ্গা, হাঙ্গামার মত প্রাকৃতিক বা মানব সৃষ্ট বিপর্যয় মুকাবিলা করার জন্য জামাআত কর্মীরা যাতে তৎক্ষনাত ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে জামাআত সে ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে জামাআত সুদূর প্রসারী কর্মসূচী নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। দিকে দিকে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গরীব দুস্থ মানুষদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ডায়গনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থ-নৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য স্বরোজগার বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ইনফর্মেশন সেল গঠনের কাজ চলছে।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ
জেলায় জেলায় এন.জি.ও- গঠনে সহযোগিতা।
রাজ্য পর্যায়ে এন.জি.ও গঠন।
নিরপরাধ মানুষের আইনী সহযোগিতা দেওয়ার জন্য মানবাধিকার সংগঠন কাজ করছে।
বিনা সূদে লেনদেন ব্যবস্থা চালু করার জন্য “সাহুলাত” মাইক্রোফিনান্স প্রতিষ্ঠা।
জেলায় জেলায় বিনাসূদী কর্জ স্কীম ও যাকাতের সামষ্টিক বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা।
প্রতি বছর দুস্থ মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা।
সাংগঠনিক পরিকাঠামো
কেন্দ্রীয় সংগঠনঃ – জামাআত এক পরামর্শ ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব মূলক সংগঠন। সারা দেশ থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিষদ বা মজলিশে নোমায়েন্দাগান জামাআতের সর্বোচ্চ পরিষদ। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে জামাআতকে দিক নির্দেশনা দেওয়া এই পরিষদের কাজ।
আমীর-এ-জামাআতঃ – প্রতিনিধি পরিষদ জামাআত সদস্যদের মধ্য থেকে উপযুক্ত ব্যক্তি আমীর-এ জামাআত নির্বাচিত করেন। প্রতি চার বছর অন্তর একবার করে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আমীর-এ জামাআত সংগঠনের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল। তাঁরই তত্ত্বাবধানে সার্বিকভাবে আন্দোলনের কাজ পরিচালিত হয়।
কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরাঃ – আমীর-এ জামাআতকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য থাকেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা।
আমীর-এ হালকাঃ – যেসকল রাজ্যে জামাআতের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে আমীর-এ জামাআতের প্রতিনিধিত্ব করেন আমীর-এ হালকা বা রাজ্য সভাপতি।
রাজ্য মজলিসে শূরাঃ – আমীর-এ হালকাকে সহযোগীতা করার জন্য প্রতিটি সাংগঠনিক রাজ্য শাখায় থাকে রাজ্য মজলিশে শূরা বা পরামর্শ পরিষদ।
মোকামী জামাআতঃ – রাজ্যের পর থাকে স্থানীয় সংগঠন। জামাআতের সাহিত্য পড়ার পর যাঁরা সাংগঠনিকভাবে জামাআতের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করতে চান তাঁদের নিয়ে গঠিত হয় স্থানীয় শাখা। কম পক্ষে দুইজন ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী হলে সেখানে প্রথমে গড়ে তোলা হয় মুত্তাফিক হালকা বা সমর্থক শাখা। সমর্থকগণ জামাআতের একনিষ্ঠ কর্মী পর্যায়ে উন্নীত হলে মুত্তাফিক হালকাকে কারকুন হালকায় উন্নীত করা হয়। যেখানে জামাআতের একাধিক সদস্য বা রুকন থাকেন সেই স্থানীয় জামাআতকে বলা হয় মোকামী জামাআত। কাজের সুবিধার জন্য সাংগঠনিক হালকাকে জেলা বা অঞ্চল বা ব্লক পর্যায়ে বিভাজন করা হয়।
মুত্তাফিকঃ- যাঁরা জামাআতের কাজে সমর্থনের পাশাপাশি সহযোগিতা করেন।
কারকুনঃ – যাঁরা একনিষ্ঠভাবে জামাআতের কাজে অংশ গ্রহণ করেন। এবং নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে স্থানীয় আমীরের নিকট শপথ গ্রহণ করেন।
রুকনঃ – যাঁরা দীর্ঘদিন জামাআতের সঙ্গে কাজ করার পর জীবনের সকল প্রকার ঝুঁকি নিয়েও জামাআতে কাজ করতে চান। যাঁরা সমস্ত কবীরা গুণাহ থেকে মুক্ত থাকার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প এবং যাঁরা নির্ধারিত ফর্ম পূর্ণ করে আমীর-এ জামাআতের অনুমোদন প্রাপ্ত হন।
মুয়াবীনঃ – যে সকল অমুসলিম ভাই জামাআতের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন ও নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করেন তাঁদেরকে মুয়াবিন বলে গন্য করা হয়।
শাখা সংগঠন
এস,আই,ওঃ – জামাআত ছাত্র ও যুবকদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের কাজ সম্প্রসারনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করে স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন বা এস. আই. ও।
রাজ্য অফিসঃ – ১৪ আলিমুদ্দিন স্ট্রীট, কোল-১৬. বিনংরঃব :- িি.িংরড়নি.ড়ৎম
জি.আই.ও ঃ- ছাত্রীদের মধ্যে ইকামাতের দ্বীনের কাজ সম্প্রসারনের জন্য জামাআত গঠন করেছে গার্লস ইসলামিক অর্গানাইজেশন বা জি. আই. ও। বর্তমানে জামাআতের রাজ্য অফিস থেকেই জি. আই.ও-এর কাজ পরিচালিত হয়।
আইটাঃ – জামাআত শিক্ষক সমাজকে সংগঠিত করে মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে অল ইন্ডিয়া আইডিয়াল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন বা অওওঞঅ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে। এটি জামাআতের শাখা সংগঠন না হলেও জামাআত সর্বদা আইটাকে নৈতিক সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করে।
সাংস্কৃতিক শাখাঃ – অনন্য সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
উলামা সংগঠনঃ- মাজলিসুল উলামা ওয়াল আইম্মা
শিশুদের সংগঠনঃ – তারার মহল
প্রকাশনী বিভাগঃ – বাংলা ইসলামী প্রকাশনী ট্রাস্ট
মুখপত্রঃ – সাপ্তাহিক মীযান